বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাদের সহযোদ্ধাদের অনুরোধ সত্ত্বেও আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে অনশনরত শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অনশনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘আমাদের সহযোদ্ধারা আমাদের এই অবস্থা দেখে অনুরোধ জানান, অনশন ভেঙে ফেলার। কিন্তু আমরা অনশনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা অনশন ভাঙবো না। আমরা এ উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো এবং চেষ্টা করবো।’
ঢাকা থেকে সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অনশনকারীরা বলেন, ‘আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো প্রয়োজনে বড় ভাইদের কাছে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা চাই। এখন আমাদের চিকিৎসা এবং খাদ্যের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সহযোগিতা করা অন্যায় নয়। আমরা বড় ভাইদের আটকের ঘটনার নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। ‘
এর আগে বিকালে আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোহাইমিনুল বাশার বলেছিলেন, আমরা আমাদের সহযোদ্ধাদের কষ্ট মেনে নিতে পারছি না। আমরা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চাই না। আন্দোলনের জায়গা থেকে তাই অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বিপুল উদ্দীপনায় আন্দোলন চালিয়ে যাবো আমরা।
অর্থ সহায়তা: সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার
এদিকে আন্দোলনে অর্থ জোগানের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এর আগে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই পাঁচজনকে সিলেট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর থানার দাড়িপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার লক্ষীকোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ১২৫/১১ ছাত্তার বিশ্বাস রোডের মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকার মিরপুর ১৭/৩ ব্লক-বি জব্বার হাউসিং মাজার রোডের একেএম মোশাররফ হোসেনের ছেলে একেএম মারুফ হোসেন (২৭), কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল আহমেদ (২৭)।
এদিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠলেও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন এখনো স্বপদে বহাল থাকার ব্যাপারে অনড়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। পরদিন রবিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। ১৫ জানুয়ারি বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় শাবি কর্তৃপক্ষ।
তবে তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলোতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন। প্রায় ২৮ জন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।